শুক্রবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা, সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা। ছবি: সংগৃহীত
গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের সুশীল সমাজের নেতারা। এ দেশের নির্বাচনি সংস্কৃতিতে ভোটকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিকতা চলা এসব ঘটনা জাতির জন্য লজ্জাজনক বলেও মন্তব্য করেন তারা। রাজনৈতিক সংস্কৃতির চরম অবক্ষয় রোধে গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল চিন্তার নানা শ্রেণীপেশার মানুষদের প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
গতকাল শুক্রবার (২ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা, সংখ্যালঘু মানুষের নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এএলআরডি’র অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন নাগরিক সমন্বয় সেল আয়োজিত এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক সমন্বয় সেলের আহ্বায়ক সুলতানা কামাল। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন নাগরিক সমন্বয় সেল-এর সমন্বয়কারী ও এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা উল্লেখ করেন, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্যাম্য ও নিরাপত্তার সাংবিধানিক অধিকারের নিশ্চয়তা রাষ্ট্র দিতে পারেনি। বিগত নির্বাচনগুলোর ধারাবাহিকতায় ভোটকেন্দ্রে না যাবার জন্য হুমকি একটি সাধারণ ঘটনা হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই ধারাবাহিকতা জাতির জন্য লজ্জাজনক, এর অবসান চাই। সংহিসতা প্রতিরোধে তাদের অঙ্গীকার দৃশ্যমান করতে হবে। হামলা প্রতিরোধ কয়েকদিনের কাজ নয়, সারাবছরের ধারাবাহিকতা। সুরক্ষা দেয়ার বিষয়টি রাষ্ট্রের এবং সকল রাজনৈতিক দলের কর্তব্য। শুধু সংখ্যালঘুদের সমস্যা নয়, জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যাার টেকসই সমাধান চাই। দায়ী ব্যক্তির বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সুলতানা কামাল বলেন, বৈরিতা ও সহিংসতা প্রতিরোধে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে না আসলে আমরা কোনো আশার আলো দেখি না। তবে এর পাশাপাশি আমাদের ভেবে দেখতে হবে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কী ধরনের বোধ ও দিক নির্দেশনা সঞ্চালিত হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ নির্বাচন এলেই হামলা নির্যাতনের শঙ্কার মধ্যে থাকে, হামলা যদি নাও হয় প্রতিনিয়ত এই শঙ্কার মধ্যে থাকাটাই মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটার দায়বদ্ধতা ক্ষমতাসীনরা কতখানি উপলব্ধি করছে এবং তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে সেটি তাদেরই প্রমাণ করতে হবে।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভ (আরডিসি)-র চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. জেড আই খান পান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এমএম আকাশ, ব্রতির নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মণিন্দ্র কুমার নাথ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসেইনসহ বিশিষ্টজনেরা বক্তব্য রাখেন।