
গাজীপুর : গাজীপুরের শ্রীপুরে ঋণের কিস্তির চাপে রুবেল মিয়া (৩৫) নামের শারিরিক প্রতিবন্ধী এক যুবক বিষ পানে আত্মহত্যা করেন। এঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে। শনিবার (০১ মে) দুপুরে উপজেলার ডোমবাড়ীচালা গ্রামে বিষপান করে আত্মহত্যার এ ঘটনা ঘটে। রুবেল ডোমবাড়ীচালা গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে। রাতে বিষয়টি জানাজাটি হয়।
জামিরদিয়া মাষ্টারবাড়ী শাখার পিদিম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক রাশেদুল আলম জানান, রুবেল মিয়া স্ত্রী সেলিনা আক্তার তাদের সমিতি সদস্য (নং-৭৫৬৪)। ২০২০ সালের ১২ই নভেম্বর সুফলন ঋণের আওতায় সে পাঁচ মাস মেয়াদী ২হাজার টাকা সুদে ২০হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে। যার সময়সীমা গত এপ্রিল মাসের ১০তারিখ উত্তীর্ণ হয়েছে।
নিহত রুবেলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার বলেন, রুবেল শারীরিক প্রতিবন্ধী। সংসারে আরাফাত, শাহাদাত ও রুমেলা নামে তিনজন সন্তান আছে। প্রতিবন্ধী স্বামীকে নিয়ে স্ত্রী সেলিনা সংসারের হাল ধরছিলেন। কৃষিকাজকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে জীবন চলছিল তাদের।
বাড়ির আঙ্গিনায় পতিত জমি চাষে টাকার সংকট পড়ায় পিদিম ফাউন্ডেশন, জামিরদিয়া মাষ্টারবাড়ী শাখা থেকে পাঁচ মাস মেয়াদী ২০হাজার টাকা ঋণ নেন। গত ১০ই মার্চ মেয়াদ শেষ হলে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় উৎকন্ঠায় ভূগছিলেন। গত বুধবার (২৮ এপ্রিল) পিদিম ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মী নাঈম বাড়িতে এসে ঋণের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। পরে রুবেল শনিবার (১লা মে) ঋণের টাকা পরিশোধে আশ্বাস দিলে মাঠকর্মী চলে যান।
সেলিনা আক্তার আরও বলেন, শনিবারও কোন টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। মাঠকর্মী আসলে তাকে কয়েকঘন্টা পর আসতে বলেন রুবেল। এনিয়ে তার স্বামীর মধ্যে হতাশা তৈরী হয়েছিল। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও টাকা সংগ্রহ করতে না পারায় শনিবার দুপুরে সে ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে। বাড়ির উঠানে গোঙানীর শব্দ পেয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে সে মারা যায়।
তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু বলেন, পারিবারিক নানা ঝামেলা ও কিস্তির টাকা জোগাড় করতে না পেরে এ যুবকের বিষন্নতা তৈরী হয়। এর থেকেই সে আতœহত্যা করেছে। তবে করোনার এই সময়ে কিস্তি উত্তোলন বন্ধ করার প্রয়োজন ছিল। কেননা প্রান্তিক কৃষকরা এমনিতেই ভালো অবস্থায় নেই।
পিদিম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক রাশেদুল আলম আরও বলেন, তার ঋণের মেয়াদপূর্ণ হওয়ায় বুধবার মাঠকর্মী তার বাড়ীতে গিয়েছিল টাকা আদায়ের জন্য। শনিবার টাকা দেয়ার তারিখ দিয়েছিল তারা। পরে আমরা জানতে পারি শনিবার সেলিনার স্বামী আতœহত্যা করেছে। বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। তবে প্রতিষ্ঠানের কেউ ঋণের কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেনি।
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: জিন্নাহ্ বলেন, রুবেল প্রতিবন্ধী ছিল। এছাড়াও সে পারিবারিক বিভিন্ন কারণে বিষন্নতায় ভুগছিলো, পাশাপাশি এনজিওসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল। এসব কারণেই আত্মহত্যা করেছে বলে তার পরিবার থেকে জানানো হয়েছে। এঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু দায়ের করা হয়েছে।
বহুমাত্রিক.কম