একটা গল্প দিয়ে শুরু করি, গ্রামের এক ধনাঢ্য ব্যক্তি প্রতিবেশী একজন গরিবের প্রতি ভীষণ মায়া দেখাতে শুরু করে। গরিব মানুষটি আসলে গরিব নয়, যথেষ্ট জমিজমা সম্পত্তির মালিক। কোনো চাষবাস করেন না। ফলে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। এর বাড়ি, ওর বাড়ি চেয়েচিন্তে চলে। এমনি অবস্থায় গ্রামের জোতদার ধনাঢ্য ব্যক্তিটির নজর পড়ে তার ওপর। কথিত গরিব মানুষটির নাম টেঠালি দাস। টেঠালি দাসের জমি রক্ষায় তারই এক আত্মীয় ভূমিকা রেখেছিল। এক সময় টেঠালি দাসের জমি বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
আত্মীয়টি তার পাশে না দাঁড়ালে জমি রক্ষা সম্ভব হত না। টেঠালির দুঃসময়ে গ্রামের জোতদারও টেঠালির বিরোধীতা করেছিল। যাতে জমি রক্ষিত না হয়। সেটি অতীত। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জমি রক্ষিত হলেও অলসতা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতায় টেঠালি অভাব-অনটনের মুখে পড়ে। এই অভাবের সুযোগে জোতদার ধনাঢ্য ব্যক্তি টেঠালির পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসেন। জমিচাষে উৎসাহিত করেন। জোতদারের নিজস্ব কৃষি উপকরণ লোকবল দিয়ে টেঠালির জমি চাষ করে দিতে থাকেন।
টেঠালির অবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি ঘটে। টেঠালিকে নানা কারণে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে থাকেন, জোতদার ধনী ব্যক্তিটি। টেঠালি আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেন। এক সময় তাকে জমি রক্ষায় যে আত্মীয় সহযোগিতা করেছিল তাকেও ভুলে যেতে থাকেন। টেঠালি সম্পূর্ণভাবে জোতদারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এমনিভাবে দিন অতিবাহিত হতে থাকে। হঠাৎ একদা জোতদার টেঠালিকে ডেকে বলে, ‘তোমাকে আমি অনেক টাকা-পয়সা দিয়েছি, সেটি কি তোমার মনে আছে? ....না হুজুর, আমি তো হিসাব রাখিনি; টেঠালি উত্তর দেন।
জোতদার কত টাকা দিয়েছেন তা হিসাবের খাতায় লিখে রেখেছিলেন। টাকা-পয়সা দেয়ার সময় টেঠালির টিপসইও রেখেছিলেন কাগজে। জোতদার সমুদয় হিসাব তুলে ধরেন। টেঠালি হতবাক হয়ে যান। কীভাবে এত টাকা শোধ দিবেন! কিন্তু টাকা পরিশোধ না করে উপায় নেই। অবশেষে জোতদার টেঠালির সব সম্পত্তি লিখে নেয়। টেঠালি রাস্তার ভিখেরি হয়ে যায়। টেঠালি জোতদারের কূটকৌশল বুঝতে পারে, কেন এত আদর করেছে।
অতিউৎসাহে তার জমিতে বিনিয়োগ করেছে? সব হারিয়ে বুঝে আর কী লাভ? নিঃস্ব রিক্ত হয়ে টেঠালি দেশান্তরিত হন। এভাবে কূটকৌশলে অনেক ব্যক্তি যেমন ধনবান, শক্তিশালী ও প্রভাবশালী হয়। তেমনি কোনো রাষ্ট্রও অন্য রাষ্ট্রকে কূটকৌশলে দুর্বল করে নিজের প্রভাব বলয় বৃদ্ধি করে থাকে। কাজেই কোনো ব্যক্তি এবং রাষ্ট্রকে টিকে থাকার জন্য ঋণ গ্রহণে সাবধান থাকাটা জরুরি। ঋণ করে ঘি-ভাত খাওয়ার চেয়ে শাক-ভাত খাওয়া অনেক ভালো। তাতে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রকে ঋণনির্ভর করা কতটা বোকামি শ্রীলঙ্কা তার বড় উদাহরণ। এখন আসি আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে প্রতিবেশী চীন বড় বড় প্রকল্পে কেন আগ্রহ দেখাচ্ছে সে প্রসঙ্গে। আমাদের সবারই মনে থাকার কথা, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে চীন প্রবলভাবে বিরোধীতা করেছিল। বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের মহান নেতা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাংলাদেশের মূল চেতনাকে ধ্বংস করে নতুন পাকিস্তানে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনা করছিল।
চীন মোস্তাক সরকারকে অভিনন্দিত করে ৩১ আগস্ট স্বীকৃতি প্রদান করেছিল। চীনের রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন আগামী ২০২৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৮ বছর উদযাপন করবেন সাড়ম্বরে। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর তাদের কাছে অর্থহীন। যাই হোক, আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার নীতিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশ অতীত ভুলে গিয়ে চীনের সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব স্থাপনে অনেক দূর এগিয়েছে।
চীন এখন আমাদের উন্নয়নের বৃহৎ অংশীদার। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আধুনিক সভ্যতার যুগে এ নীতিটি যথেষ্ট গণমুখী তাতে সন্দেহ নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠেছে। শেখ হাসিনার প্রায় টানা ১৪ বছরের শাসনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও লাভ করেছে বাংলাদেশ।
আগামী ২০৪১ সালে উন্নত দেশের তালিকায় স্থান পাওয়ার প্রত্যাশা করে নানাবিধ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সে মুহূর্তে অচেনা মহামারি করোনাভাইরাসের আক্রমণে থমকে যায় বিশ্ব অর্থনীতি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যার যার মতো করে করোনা মোকাবিলা করেছে বা করছে। বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় সাফল্য দেখিয়ে বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বেঁধে যায়। এ যুদ্ধের প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি গতিরোধে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিশ্বে শুরু হয়েছে অস্থিরতা।
নানা ধরনের গুজব ডালপালা ছড়াচ্ছে। ২০২৩ সালে বিশ্ব ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মুখে পতিত হবে আভাস দেয়া হচ্ছে, জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা থেকে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মোকাবিলায় যে-যেভাবে পারে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেভাবে। এমনি পরিস্থিতিতে কোনো কোনো দেশ তাদের বাণিজ্য প্রসারে কৌশলী ভূমিকা অবলম্বন করছে। অপেক্ষাকৃত অর্থ ও অস্ত্রে সমৃদ্ধ দেশগুলো প্রতিবেশী কম ক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলোকে টার্গেট করে নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে চীন অন্যতম।
আমি চীনের বিরোধীতা করছি না। কিন্তু তাদের অতীত এবং সাম্প্রতিক কার্যকলাপে এ সাক্ষ্যই বহন করে। এখানে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরতে চাই-২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে ১২টি ঋণ ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি, ১৫টি সমঝোতা স্মারক। এগুলোর মধ্যে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব ছিল অন্যতম। তবে এটাকে বাংলাদেশ সরকার বিনিয়োগ প্রস্তাব হিসেবে ঘোষণা করে।
ই-আরডি সূত্র থেকে জানা যায়, চীনা অর্থায়নে প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ ও পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরের কাছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। উল্লেখ্য, এ দুটো বৃহৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেগুলো সমাপ্ত হয়নি। চীনা প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। কিন্তু টাকা খরচ হয়ে গেছে অনেক।
বাংলাদেশ চীনের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মধ্যে ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পে ২১.৫ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি সাহায্য, ৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারের অনুদানের জন্য অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা চুক্তি, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে ৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি, দাশেরকান্দি পয়ঃনিষ্কাশন ট্রিটমেন্ট পয়েন্টে ২৮ কোটি ঋণ চুক্তি অন্যতম। তাছাড়া দুই দেশের মধ্যে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ ও দাশেরকান্দি ট্রিটমেন্ট পয়েন্ট নির্মাণেও দুটি কাঠামো চুক্তি, ‘ওয়ান বেল্ট, ‘ওয়ান রোড, সহযোগিতা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। কোনো কোনো প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্পের খরচ বৃদ্ধি করে নতুনভাবে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে- এতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ১০ হাজারে উন্নীত হচ্ছে।
চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ পাচ্ছে চুক্তি মোতাবেক এবং প্রকল্পের রসদ বেশি দামে চীন থেকে আমদানিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দাকালে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রকল্পে আটকে গিয়ে দেশের অর্থনীতিতে সীমাহীন চাপ তৈরি হচ্ছে। চীনের অধিকাংশ ঋণের পরিমাণ কত তা জনগণের কাছে থাকছে অজানা। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিক, চীনা অর্থায়নকে অভিনন্দন জানাচ্ছে। কারণ এতে তাদের ব্যক্তিগত লাভ বেশি হয়। আর চীনের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনৈতিক প্রভাব বলয় বৃদ্ধি করা। চীন এমন সময় বাংলাদেশকে ঋণ টার্গেটে ফেলছে যখন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় শুরু হয়েছে।
একই সঙ্গে চীন-ভারতের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কও দৃশ্যমান হচ্ছে। চীন এ সময় কেন বাংলাদেশকে এত প্রলোভন দেখাচ্ছে-এর অর্থ হচ্ছে ভারতকে কোণঠাসা করা। ভূরাজনীতিতে চীনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। এদিকে বাংলাদেশে চীন-ভারত ইস্যুতে একটি ভারসাম্য অবস্থান তৈরি করে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে; কিন্তু এতে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে, তা সময়ই বলে দেবে। সুতার মতো ভারসাম্যের রশিটা যদি ছিড়ে যায়, তবে বাংলাদেশ যে খাদে পড়ে যাবে, সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। শ্রীলঙ্কাকে যেভাবে খেয়েছে, বাংলাদেশকেও সেদিকেই ধাবিত করছে।
চীন যদিও অস্বীকার করছে, শ্রীলঙ্কা তাদের ঋণের কারণে নয়, পশ্চিমাদের কারণে দেউলিয়া হয়েছে। এমন যদি হয়ে থাকে, তবে কেন তারা শ্রীলঙ্কার প্রধান সমুদ্রবন্দর হাম্বানটোটা দখল করল! চীন ঋণ দানে এমন একটা ফাঁদ তৈরি করে, যে ফাঁদ থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব হয় না। শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসের সরকারকে চীন নানাভাবে প্রলোভন দেখিয়ে সীমাহীন দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে পরিণত করেছে, এতে কী সন্দেহের অবকাশ আছে? চীন যেটা চেয়েছিল শ্রীলঙ্কায় সেটি হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের প্রত্যাশা কী, সেটা ভাবতে হবে। বাংলাদেশকে নিয়ে কেন এত আগ্রহ? এ প্রশ্নটি এসে যায়। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চীন এখন স্থিতিশীল বাংলাদেশ চায়।
শান্তি ও স্থিতিশীলতা উন্নয়নের পূর্বশর্ত চীনা রাষ্ট্রদূত এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের জ্ঞান দিচ্ছে কেন? উন্নয়নের শর্তগুলো কী আমাদের সেটা ভালো করেই জানা আছে। গত ২৬ অক্টোবর ২০২২ কূটনৈতিক রিপোর্টার সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক, অনুষ্ঠানে চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীন বাংলাদেশকে খুবই ভালো কৌশলগত অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীন নীরবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে অনেক চীনা কোম্পানি বিনিয়োগে আগ্রহী। চীনারা বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে দেখে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের যে অঞ্চলে বৈশ্বিক মনোযোগের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে, সেখানে কোনো অস্ত্র প্রতিযোগিতা হোক। চীন এটা প্রত্যাশা করে না।’ চীনা রাষ্ট্রদূতের এ সময় এ কথা বলার মূল কারণ হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে ভারত-বাংলাদেশের নৌ-বাহিনীর যৌথ মহরা। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ-ভারতের নিয়মিত মহরা চীন ইতিবাচকভাবে দেখছে না।
ডিকাব টকে তিনি এও বলেছেন, ভারতের সঙ্গে চীনের কোনো কৌশলগত বৈরিতা নেই। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাসহ দেশটির বেসামরিক নাগরিকদের নিপীড়ন ও হত্যা করার পরও চীন জাতিসংঘে মিয়ানমারের পক্ষে ভোট দিয়েছে। মোদ্দাকথা, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর বর্বরতাকে চীন সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে, অস্ত্র রসদও সরবরাহ করে আসছে। যেমনটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যাকে সমর্থন করেছিল। তারা শান্তি ও স্থিতিশীলতার কথা বলে, কিন্তু তাদের গোপন মিশনের অর্থটা ভিন্ন।
অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় অর্থাৎ যে প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে কোনো ভূমিকা নেই, সেই সব প্রকল্পে চীনা আগ্রহ অনেক বেশি। তারা অবকাঠামোগত উন্নয়নে সম্পৃক্ত থেকে চীনা যন্ত্রপাতি ও টেকনিক্যাল সহযোগিতায় অধিক মনযোগী। এতে তাদের লাভ অনেক বেশি। এই যে, কর্ণফুলী টানেল এটাতে আমাদের কী লাভ হবে? সেটা কী আমরা হিসাব করে দেখেছি। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণে এ প্রকল্পে ব্যয় করে কতদিনে তার সুদ-আসল ফিরে আসবে? তিন জনমে কী সেটা সম্ভব হবে?
এদিকে বাংলাদেশের সীমান্তে মিয়ানমারের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি উদ্বেগ সৃষ্টি করছে এ ব্যাপারে চীন কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশে চীনা রাষ্ট্রদূতের ভাষ্যানুযায়ী চীনে নিয়োজিত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে নাকি আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও চীনা দূতের আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিলেও ফলাফল শূন্য।
সীমান্তে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। চীন মনে করে না যে, পশ্চিমা চাপ মিয়ানমারের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। সমস্যা সমাধান করতে হবে দ্বি-পাক্ষিকভাবে। এই সমস্যা সমাধানে এশিয়ান উপায় আছে বলে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং মন্তব্য করেছেন। কিন্তু সে উপায়টা কী তার ব্যাখ্যা দেননি। সবকিছুর মধ্যে একটা ধোয়াশা থেকে যাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক যে, ভূরাজনীতিতে কৌশলগত সুবিধা চিন্তায় সব রাষ্ট্রই তৎপর থাকবে।
চীন-ভারত ইস্যুতে বাংলাদেশকে বুঝেশুনে কাজ করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাণিজ্যিক উদারনীতিতে এখানে সবাই বিনিয়োগ করতে পারবে, কিন্তু উদ্দেশ্যটা মহৎ থাকা জরুরি। চীনের আগ্রহে কতটা মহত্ম আছে, সেটা ভাবতে হবে। শ্রীলঙ্কার কথাটা আমাদের মাথায় রাখা উচিত।
লেখক: কলাম লেখক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক
বহুমাত্রিক.কম