-ড. আতিউর রহমান ছবি: উন্নয়ন সমন্বয়
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারত দুদেশের বাণিজ্যে লেনদেনের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের শুভ সূচনা করেছে। ডলারের বদলে ভারতীয় মুদ্রা রুপিতে দুটো এলসি খোলার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক এই বাণিজ্য যাত্রা শুরু করে। দুদেশের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ষোলো বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। এর একটি অংশ এখন রুপিতে করা যাবে। পরবর্তী পর্যায়ে টাকাতেও তা করা যাবে। বাংলাদেশের সোনালী ও ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও আইসিআইসিআই ব্যাংক শুরুতে এই বাণিজ্যে অংশীদার হলেও পরে অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।
এই শুভযাত্রাকে একটি ‘ল্যান্ডমার্ক’ ঘটনা বলে বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এর মাধ্যমে আমাদের দুদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে এক নয়া অধ্যায়ের সূচনা হলো। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, এই নয়া লেনদেন ব্যবস্থার ফলে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চলমান চাপ খানিকটা হালকা হবে। তা ছাড়া দুদেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের খরচও কমবে।
কেননা এর ফলে টাকা-ডলার-রুপির দ্বৈত কনভারশনের প্রয়োজন হবে না। তা ছাড়া সহজে লেনদেনের একটা ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও পড়বে আমাদের রপ্তানি পণ্যের ভারতীয় ক্রেতাদের মনে। ভারতীয় হাইকমিশনারও এই লেনদেন সহজ, ক্ষিপ্র ও দক্ষ হবে এবং দুদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে। বিভিন্ন চেম্বার নেতারাও আঞ্চলিক বাণিজ্যের এই নবযাত্রাকে স্বাগত জানিয়েছেন। নিঃসন্দেহে ভারতের সঙ্গে রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যক্রমের ফলে নতুন একটি পেমেন্টে সেটেলমেন্টের দ্বার উন্মোচন হলো। এটি আকু পরিশোধ পদ্ধতির আংশিক বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
আগেই বলেছি, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। বছরে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমরা ভারত থেকে আমদানি করে থাকি। অন্যদিকে ওই দেশে আমাদের বার্ষিক রপ্তানির পরিমাণ মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের মতো। রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেক পণ্য তৃতীয় দেশের রপ্তানি আদেশের বিপরীতে সম্পাদিত হয়ে থাকে। এতে করে বাণিজ্যিক খরচ বেড়ে যায়।
সরাসরি ভারত থেকে প্রাপ্ত রপ্তানি আদেশের বিপরীতে রপ্তানি আয় থেকে অর্জিত রুপি দিয়ে ওই পরিমাণ আমদানি করা যাবে। তার মানে আকু পদ্ধতিতে কিছুটা হলেও বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ নিষ্পত্তির চাপ কমবে। তবে সবাই রুপির বিনিময়ে রপ্তানি করবে এমনটি নয়। তার মানে, রুপির পাশাপাশি ডলারেও রপ্তানি বাণিজ্য চলতে থাকবে। যদি আসলেই সহজ হয় তা হলে রুপি বাণিজ্যের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়বে। সেই অর্থে এটি ছোট্ট একটি শুরুর পদক্ষেপ। কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি সম্ভাবনার নয়াদিগন্ত উন্মোচনের পদক্ষেপ।
মানতেই হবে, বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার দেশ। বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি বৃদ্ধি করা হলে নতুন পদ্ধতিতে আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে। তাই বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি বাড়ানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেজন্য গার্মেন্টস রপ্তানিকারকরা ছাড়াও প্রাণের মতো ভিন্ন ধাঁচের রপ্তানিকারকদের আরও উৎসাহ দিয়ে রপ্তানি বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। আশার কথা, গেল অর্থবছরে ভারতসহ নতুন বাজারে পোশাক রপ্তানি প্রায় ৩৫% বেড়েছে। এই গতি ধরে রাখতে হবে।
এক দশকের অধিক সময় ধরে বাংলাদেশি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সেলস কন্ট্রাকটের আওতায় রপ্তানি করছে। অনেক ক্ষেত্রে ৯০ দিন থেকে ১২০ দিনের বাকিতেও পণ্য রপ্তানি করতে হয়। অন্যদিকে আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশি আমদানিকারকরা এলসির ওপর নির্ভরশীল। এলসি ব্যবস্থা ব্যয়বহুল, কেননা বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে তা কনফারমেশন করাতে হয়। দুবাই কিংবা পশ্চিমের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এই কনফারমেশনের খরচ দিন দিনই বাড়ছে। তাই ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ প্রথাসিদ্ধ এই লেনদেন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনাটা জরুরি হয়ে পড়েছে। উল্লেখ্য, আমদানি বাণিজ্যের সুবিধার্থে ২০১২ সালে বায়ার্স ক্রেডিটের মাধ্যমে আমদানি ব্যবস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তন করে। এটি ইউপাস (ইউজেন্স পেমেন্ট অ্যাট সাইট) এলসি নামে সর্বজনবিদিত। ভারত থেকে আমদানির ক্ষেত্রে এই লেনদেন ব্যবস্থা কার্যকরী করা গেলে এই বাণিজ্যে নিশ্চয় গতি আরও বাড়বে। রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এলসির যুগ শেষ হলেও বাংলাদেশের প্রায় শতভাগ আমদানি এলসির ওপর নির্ভরশীল। কোভিড ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশি^ক সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হয়েছে। সে কারণে আমদানি বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে। এর প্রভাব এখনো চলমান রয়েছে।
সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হওয়ার ফলে আমদানি ব্যয় বেশ বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রার লিকুইডিটিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে চাইছে না। বিশেষ করে ছোটখাটো আমদানিকারকদের ডলার জোগাড় করে এলসি খোলা খুবই কষ্টকর হয়ে গেছে। তাদের বেশিরভাগ এখন তাই অনানুষ্ঠানিক আমদানির দিকে ঝুঁকছেন। এই প্রেক্ষাপটে ভারতীয় সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে পণ্য পাওয়া গেলে পারচেজ কন্ট্রাকটের আওতায় আমাদের আমদানিকারকরা সহজেই তা আমদানি করতে পারবেন। আর এর দায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয় দ্বারা মেটানো যাবে। কন্ট্রাকটের আওতায় বাণিজ্য সম্পাদন ঝুঁকিপূর্ণ- এ কথা সত্য। তবে ইন্দো-বাংলা জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশনের আওতায় গঠিত ব্যাংকিং সাব-গ্রুপের কার্যক্রম গতিশীল করা হলে ট্রেড ডিসপুট সহজেই সমাধান করা যাবে। দুদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা অতীতে দুই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় অনেক বাণিজ্যিক লেনদেন সমস্যা মেটাতে পেরেছি। এখনো তা সম্ভব।
তা ছাড়া ভারতীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যাংকের দীর্ঘদিনের ব্যাংকিং সম্পর্ক রয়েছে। এলসি ব্যবস্থায় আমদানির ক্ষেত্রে কনফারমেশন ছাড়াই তা গ্রহণের ব্যবস্থা করা গেলে আমদানি ব্যয় কমবে। এ বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রেও সমস্যা হলে বিদ্যমান নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে সক্রিয় করার সুযোগ রয়েছে।একই সঙ্গে ভারতীয় প্রতিসঙ্গী ব্যাংকগুলোকে রুপিতে বায়ার্স ক্রেডিট সুবিধা প্রদান করতে হবে। এতে করে রুপি পদ্ধতিতে বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে। তখন দুই দেশের বাণিজ্যিক উদ্যোক্তাদেরই রুপিতে বাণিজ্য করার আগ্রহ বাড়বে।
বিদেশি ব্যাংক বাংলাদেশে টাকায় ভস্ট্রো হিসাব খুলতে পারে। ভারতীয় ব্যাংকে রুপিতে নস্ট্রো হিসাব খোলার সঙ্গে সঙ্গে ওই দেশের ব্যাংক বাংলাদেশে টাকায় ভস্ট্রো হিসাব খুললে বাংলাদেশি রপ্তানিকারক টাকাতেও রপ্তানি করতে পারবে। এতে করে রুপি-টাকার সরাসরি বিনিময় হার তৈরি হবে এবং লেনদেনে অধিকতর স্বস্তিসহ বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। তবে এই বিনিময় হারটিও আপাতত ডলারের সঙ্গে দুই মুদ্রার বিনিময় হারকেই রেফারেন্স রেট হিসেবে ধরতে হবে। আমরা চাই বা না চাই এখনো ডলারই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধানতম লেনদেন মাধ্যম। এই সত্যিটি মেনে নিয়েই আমাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ধীরে ধীরে সৃজনশীলতার চেষ্টা করে যেতে হবে।
ভারতও এই ব্যবস্থাকে মেনেই তার মুদ্রা রুপিকে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশটি প্রায় ২২টি দেশের সঙ্গে রুপি বাণিজ্যের সূচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৮টি দেশের সঙ্গে তা সীমিত আকারে হলেও চলমান। উনিশতম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এই কাফেলায় যোগ দিল। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ভারত দেনদরবার করে চলেছে। উল্লেখ্য, চীনের মুদ্রা ইউয়ান রেনমিনবির মতো রুপি এখনো আন্তর্জাতিক রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে স্বীকৃত নয়। অনেক দেশের সঙ্গে সাফল্যের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য ব্যবস্থা পরিচালনা করা গেলে ভারতীয় মুদ্রাও আন্তর্জাতিক রিজার্ভ মুদ্রা বাস্কেটে স্থান করে নেওয়ার আশা রাখে। ভারত সেই প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন ভারতীয় অর্থনীতির আকার বাড়ছে। তার বাণিজ্যের আকারও বাড়ন্ত। তাই দেশটির এই প্রত্যাশা মোটেও অবাস্তব নয়। রুপিতে বাণিজ্য করার পক্ষে ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশনাগুলোও এখানে উল্লেখ করা সমীচীন হবে।
জুলাই ১১, ২০২২ তারিখে ভারতীয় মুদ্রা রুপির মাধ্যমে আমদাানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে আরবিআই একটি সার্কুলার জারি করে। আলোচ্য সার্কুলারের বিষয়ে বৈশ্বিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। রুপিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় রূপান্তরের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে অনেকেই এই নির্দেশনাকে একটি উল্লেখযোগ্য ধাপ বলে মন্তব্য করেছেন।রুপির মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের কাঠামো : বিদেশি ব্যাংককে ভারতে স্পেশাল রুপি ভস্ট্রো (এসআরভি) হিসাব পরিচালনা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আরবিআইর পূর্বানুমতির প্রয়োজন হবে। এসআরভি ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে পরিশোধ নিষ্পত্তির পুল হিসেবে কাজ করবে।
লেনদেন পদ্ধতি : সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানি পরিচালনার ক্ষেত্রে রুপিতে ইনভয়েস ইস্যু করতে হবে। বাজারভিত্তিক বিনিময় হারে বৈদেশিক মুদ্রা রুপিতে রূপান্তরিত হবে। পরিশোধ নিষ্পত্তি এসআরভি পুলের মাধ্যমে হবে।
পরিশোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া : এসআরভি পুলে ভারতীয় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আমদানি বাবদ অর্থ রুপিতে জমা দেবে। জমাকৃত অর্থ দ্বারা রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য ভারতীয় রপ্তানিকারক রুপিতে পাবে। প্রচলিত পদ্ধতি অনুযায়ী বিদেশি একই ক্রেতা বা সরবরাহকারীর সঙ্গে দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি এসআরভি পুল থেকে করা যাবে।আরও স্পষ্ট করে বলা চলে আমদানি বাবদ পরিশোধ্য অর্থ দ্বারা রপ্তানি ব্যয় নিষ্পত্তি করা হবে। এ বিষয় বিবেচনায় নিট রপ্তানিকারক দেশ এসআরভি ব্যবস্থায় বাণিজ্য করতে পারবে। তবে নিট আমদানিকারক দেশ আলোচ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে বাণিজ্য পরিচালনা করতে চাইলে তাদের রপ্তানি অংশ পর্যন্ত এসআরভি ব্যবস্থায় বাণিজ্য করতে পারবে।
ওপরের এই আলোচনা থেকে বোঝা যায়, দুই প্রতিবেশী দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিনই গভীরতর হচ্ছে। নতুন বাজার হিসেবে আমাদের পোশাকসহ রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। এই ধারাটা আরও বেগবান করার লক্ষ্যেই রুপি ও টাকায় সীমান্ত বাণিজ্য জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমাদের সীমান্ত হাটগুলোতেও এই টাকা-রুপি লেনদেন বাণিজ্য সক্রিয়ভাবে প্রচলন করার সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। তা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই আমাদের জাতীয় টাকা কার্ড চালু হবে। আর ডিসেম্বর নাগাদ এর সঙ্গে ভারতীয় রুপি যুক্ত হবে। এই ডেবিট কার্ড চালু হলে আমাদের দেশ থেকে যে বিশ-পঁচিশ লাখ মানুষ প্রতিবছর চিকিৎসা, শিক্ষা ও পর্যটনের জন্য ভারত সফর করেন তাদের লেনদেন টাকা ও রুপিতে করা যাবে। বাংলাদেশে যে কার্ডে টাকায় খরচ করা যাবে তাই সীমান্তের ওপারে রুপিতে খরচ করা যাবে। বিদেশ ভ্রমণে বিদেশি মুদ্রা খরচের সীমার মধ্যেই এই লেনদেন হবে। চিকিৎসা ও শিক্ষা খরচের বেলায় ওই সীমার বেশি লাগলে হয়তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ অনুমতি লাগতে পারে। এতে করে একদিকে সীমান্ত বরাবর লেনদেন আনুষ্ঠানিক রূপ নেবে। দুবার কনর্ভারশন (টাকা-ডলার-রুপি) বাবদ যে ৬%-এর মতো খরচ হয় তা আর হবে না। কত টাকা এ বাবদ খরচ হচ্ছে তার একটা আনুষ্ঠানিক হিসাবও এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে। এখন এ বাবদ খরচ প্রায় পুরোটাই অনানুষ্ঠানিক। তাই জানারই উপায় নেই, কত ডলার এজন্য দেশ থেকে পাশের দেশে চলে যাচ্ছে। তা ছাড়া ভারতগামী আমাদের নাগরিকদের এই দ্বৈতকার্ড ব্যবহারের ফলে লেনদেন নিরাপত্তা ও স্বস্তি দুই-ই বাড়বে।
সবশেষে বলা যায়, সদ্য চালু হওয়া এই লেনদেন ব্যবস্থায় অনেক বাধা ও অসঙ্গতি থাকতেই পারে। তবে ‘লার্নিং বাই ডুইয়িং’ নীতি অনুসরণ করে ধীরে ধীরে এই লেনদেন ব্যবস্থা মসৃণ ও পোক্ত হবে। একইভাবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সদ্য চালু হওয়া রুপিতে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য ভারত বাংলাদেশকে (বিশেষ করে জ্বালানি আমদানি বাবদ) পাঁচ বছর মেয়াদি একটি নতুন ‘লাইন অব ক্রেডিট’ প্রদান করতে পারে। ফলে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে তা বেশ খানিকটা সামলে নেওয়া সম্ভব হবে। অন্যদিকে দুই দেশের বাণিজ্যের গতি ও সার্বিক বোঝাপড়া আরও বিকশিত হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।
ড. আতিউর রহমান : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর