Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

পৌষ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

আলোর উৎসব দীপাবলিতে কেটে যাক সব আঁধার 

মানিক লাল ঘোষ

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

প্রিন্ট:

আলোর উৎসব দীপাবলিতে কেটে যাক সব আঁধার 

ছবি- সংগৃহীত

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের   অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা শেষ হওয়ার সাথে সাথে  দেবী দুর্গার আরেক রূপ   মঙ্গলময়ী, শক্তিরূপিণী শ্যামা মায়ের পূজার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে  উঠে।  এই পুজাকে ঘিরে 
 শুরু হয় আলোর উৎসব দীপাবলির কাউন্ট ডাউন।সেই অপেক্ষাতে কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পক্ষ তিথিতে হয় শ্যামা পুজা। এই শ্যামা মায়েরই  আরেক নাম মা কালী।

এই শ্যামা  বা কালী পুজা উপলক্ষে উদযাপিত হয়  দীপাবলি উৎসব। দীপাবলি  শব্দটির অর্থ  প্রদীপের সমষ্টি  বা  আলোর সারি। সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয়গ্রন্থ  থেকে  জানা যায়  এক বা একাধিক কারন রয়েছে  দীপাবলিতে  হিন্দুধর্মালম্বীদের আলোর উৎসবে  উচ্ছ্বাসিত হওয়ার।   ঘরে ঘরে  ছোট ছোট প্রদীপ জ্বেলে আয়োজন করা হবে দীপাবলি উৎসবের। 

দীপাবলী -আলোর উৎসবে  অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক শুভ দেওয়ালি বা দীপাবলী। অন্ধকারকে দূর করে শুভ ও কল্যাণের প্রতিষ্ঠায় এ উৎসব উদযাপন করা হয়। দীপাবলি ভারতের জাতীয় মহোৎসব। সনাতন হিন্দু মতে দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব। কালের বিবর্তন  ধর্মীয় গন্ডি পেড়িয়ে দীপাবলি  বাংলাদেশে এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিনত হয়েছে। সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশ গ্রহণে  দীপাবলি  কল্যানের বার্তা বয়ে আনে।

প্রাচীন প্রথা অনুসারে দীপাবলির সন্ধ্যায় তেল দিয়ে সহস্র মাটির প্রদীপ জ্বালানো হয়। তবে বর্তমানে শহরাঞ্চলে অনেকে তেলের প্রদীপের পরিবর্তে মোমবাতি ব্যবহার করেন। প্রতিটি  গৃহে কল্যান ও শুভবার্তা  নিয়ে  আসার কামনায়  গৃহের সকল দরজা ও জানালা প্রদীপ   ও নানান রঙের মোমবাতিতে সজ্জিত করা হয়।

দীপাবলি ও শ্যামাপূজাকে ঘিরে  সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মেতে ওঠে   আনন্দ উৎসবে। দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে কল্যাণের অঙ্গীকার নিয়ে পৃথিবীতে আগমন ঘটে দেবী শ্যামা বা  মা কালীর। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে তাই শ্যামা দেবী শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংগ্রামের প্রতীক।

কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সাধারণত শ্যামা পূজা বা কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হিন্দু পুরাণ মতে কালী দেবী দুর্গারই আর একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালী পূজা হচ্ছে শক্তির পূজা।

আবার এমনও কথা প্রচলিত  রয়েছে যে ত্রেতা যুগে চৌদ্দ বছর বনবাসে থাকার পর নবমীতে শ্রীরাম রাবণ বধের বিজয় আনন্দ নিয়ে দশমীতে রাজ প্রাসাদ অযোধ্যায় ফিরে আসেন। রামের আগমন বার্তা শুনে সমস্ত প্রজাকূল তাদের গৃহে প্রদীপ জ্বালিয়ে আনন্দ উৎসব পালন করেন।  সেই উৎসবই  সনাতনীদের দীপাবলি উৎসব।

এই দিন  আবার বাঙালি  হিন্দু  সম্প্রদায় তার পুর্বপুরুষের ও মৃত  স্বজনের  আত্মার শান্তি কামনায়  মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন করে সমাধিস্তম্ভে ভিড় করে।প্রার্থনা করে  মৃত স্বজন যেনো বৈকুন্ঠবাসী হন। এর কারনে এই উৎসব শ্মশান দীপালি নামে ও পরিচিত। বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃত স্বজনের সৎকারের জন্য সংরক্ষিত সকল শ্মশান ঘাটে ও পারিবারিক ভাবে নিজ বাড়িতে সমাধিসৌধ এই শ্মশান দীপালি উৎসব অনুষ্টিত হয়। দীপাবলি, শশ্মান দীপালি ও দেয়ালি আর কালি পুজাকে ঘিরে  দেশের সকল সনাতন ধর্মাবলম্বীূদের মধ্যে বইছে আনন্দের জোয়ার। 

রাজধানীর  ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির,  রমনা কালী মন্দির, রাম কৃষ্ণ মিশন ও মঠ , সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, সবুজবাগ থানাধীন শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক ৮৪নং বনগ্রাম রোডস্থ রাধাগোবিন্দ জিঁও ঠাকুর মন্দির, পোস্তাগোলা মহাশ্মশান, রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকেশ্বরী বাড়ী, সূত্রাপুরের বিহারীলাল জিঁও মন্দির, গৌতম মন্দির, রামসীতা মন্দির, ঠাটারী বাজারে শিব মন্দির, তাঁতী বাজার, শাখারী বাজার, বাংলা বাজারসহ দেশের  সকল  কালি  মন্দিরে  ও  অনেক  আবার পারিবারিক ভাবে কালি পুজার আয়োজন করে।

অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের  দীপাবলি উৎসব ও কালি পুজা কিছুটা  ভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুষ্টিত হচ্ছে।  সম্প্রতি   রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের  বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে।  দুর্গা পূজায় অনেক  জায়গায় প্রতিমা ভেঙে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে এবার দীপাবলি উৎসবে সকল অশুভ শক্তির বিনাশ ও  বাংলাদেশকে আলোকিত  করতে কল্যানময়ী,শক্তি রূপীনি শ্যামা মায়ের কাছে  বিশেষ প্রার্থনা জানাবে এদেশের  সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।

লেখক: ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহ সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং  বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক। 

*প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer