ঢাকা : তিনি শান্ত। স্থির। বুকের নীচে ভাঁজ করা ডানহাত হয়তো বা ধরে রেখেছে মোবাইল। কোমর থেকে ভাঁজ করা বাঁ হাতের মেলে ধরা তেলো বলছে, ‘তফাৎ যাও’! তাঁর গোড়ালি-ঝুল কালো-সাদা বুটিদার পোশাক হাওয়ায় দুলে উঠলেও শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ানো কালো মেয়েটি নিষ্কম্প।
তাঁর সামান্য বাড়িয়ে দেওয়া বাঁ-হাতি ব্যারিকেডের ওধারে ঠিক সেই খণ্ডমুহূর্তে থমকে গিয়েছে দুই শ্বেতাঙ্গ, ‘রায়ট গিয়ার’-আশ্রিত পুলিশ! নিসর্গের একদিকে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে তাঁদেরই সহকর্মীরা। তাৎপর্যপূর্ণভাবে মেয়েটির ঠিক সামনে এবং পিছনে রাস্তার দু’টি হাল্কা চিড় তাঁকে স্থাপিত করেছে এক অমোঘ স্বাতন্ত্রে।
কৃষ্ণাঙ্গ-হত্যার প্রতিবাদে আমেরিকায় লুইজিয়ানার রাজধানী শহর ব্যাটন রুজের আন্দোলনমুখর রাস্তায় তোলা এই ছবি এখন ইন্টারনেটে ‘ভাইরাল’। পুলিশের সহিংস মেজাজের বিপরীতে প্রতিরোধের এই সপাটশান্ত ব্যঞ্জনা— অনেকেরই বিবেচনায় ‘আইকনিক’। ২৮ বছর বয়সি ওই কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা লিশা এভান্স পেশায় নার্স। তাঁর একটি পাঁচ বছরের পুত্র রয়েছে।
সংবাদসংস্থা রয়টার্সের চিত্রসাংবাদিক জোনাথন বাখমানের তোলা লিশার ছবির সঙ্গে তুলনা চলছে ভিয়েতনাম যুদ্ধের আবহে সারিবদ্ধ বেয়নেটের সামনে ফুল হাতে এক মহিলার ছবি। ১৯৬৭ সালে ফরাসি চিত্রগ্রাহক মার্ক রিবু তুলেছিলেন সেই ছবি। ১৯৮৯ সালে বেজিংয়ের তিয়ানানমেন স্কোয়ারমুখী ‘চিরশান্তির সড়কে’ (চিনা ভাষায় ‘চাংগান অ্যাভিনিউ) সেনা-ট্যাঙ্কের সারির সামনে এক ব্যক্তি একা দাঁড়িয়ে যে প্রতিরোধের বার্তা দিয়েছিলেন, তা-ও ক্যামেরাবন্দি হয়ে ‘আইকনে’র মর্যাদা পেয়েছে। লিশার ছবির সঙ্গে সেই ছবি নিয়েও তুলনা চলছে। তুলনা চলছে সম্প্রতি সুইডেনের রাস্তায় একটি জবরদস্ত নব্য নাৎসি মিছিলের সামনে কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার আন্দোলনকর্মী মারিয়া টেরেসা আসপ্লুন্ডের মুষ্টিবদ্ধ হাতের ছবি নিয়ে। চর্চা হচ্ছে নোয়াখালি-হিংসার পরে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী, বাবরি-ধ্বংসের পরে কলকাতার রাস্তায় মাদার টেরিজার ছবি নিয়েও।
ওই ছবি সম্পর্কে বাখমান বলেছেন, ‘‘ব্যাটন রুজে পুলিশের সদর দফতরের দিকে এগোচ্ছিল প্রতিবাদী মিছিল। পুলিশকে ছুটে আসতে দেখে মেয়েটি (লিশা) দাঁড়িয়ে গেল। বুঝলাম, ও আর এগোবে না। মনে হল, ও যেন বলতে চাইছে, আমায় ধরতে হলে এবার তোমাদেরই (পুলিশ) এগিয়ে আসতে হবে।’’ ওই প্রতিবাদের আরেকটি ছবিও তুলেছেন বাখমান। যার বিষয়বস্তু, পুলিশের ভারী বুটের ফাঁক দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা এক কৃষ্ণাঙ্গের দু’টো বিস্ফারিত চোখ!
ছবিতে লিশা এবং পুলিশের দূরত্ব ‘ফ্রিজ’ হয়ে গেলেও বাস্তবে অবশ্য তা ঘটেনি। রাস্তা থেকে সরতে না চাওয়ায় তাঁকে আটক করেছে পুলিশ। লিশা বলেছেন, ‘‘এটা ঈশ্বরের কাজ। আমি যন্ত্র মাত্র।’’
এবেলা