ছবি- সংগৃহীত
বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনাই দেশের গরিবদের একমাত্র আপনজন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার দুপুরে নওগাঁ শহরের নওজোয়ান মাঠে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, মিথ্যাচার বিএনপির একমাত্র সম্বল। মিথ্যাকে পুঁজি করে তারা চলে। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে কোনোকিছু বাধে না। মুখে যা আসে তাই বলে।
তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং ও ডলার সংকটে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কষ্ট পাচ্ছেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর পর গরিব মানুষের একমাত্র আপনজন শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন ঘণ্টা ঘুমান। আর বাকি সময় তিনি রাত জেগে কাজ করেন। সারাদিন বসে বসে দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ জনগণের কথা ভাবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আনন্দ করার জন্য শেখ হাসিনা বিদেশে যান না। প্রমোদ ভ্রমণের জন্য নয়। শেখ হাসিনা সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন। তিনি নালিশ করতে যান নাই। তিনি বিদেশ সফরে গেছিলেন বাংলাদেশের সহযোগিতার জন্য। অথচ তার সফর নিয়ে ফখরুল মুখে বাধে না, যা ইচ্ছে তাই বলেন।’
‘মিথ্যাচার তাদের (বিএনপি) একমাত্র সম্পদ। মিথ্যাকে পুঁজি করে তারা আজকে শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তাকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে চায়।’-বলেন কাদের।
বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘দেখতে দেখতে ১৪ বছর চলে গেছে। ১৫ বছরে পা দিয়েছে। বিএনপির আন্দোলন হয় না। মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। তার মানে জনগণ না থাকলে, পাবলিক না থাকলে আন্দোলন হয় না। পাবলিক নাই বিএনপির আন্দোলন নাই। বিএনপির আন্দোলন ভুয়া। ৫২ দফা ভুয়া, ২৭ দফা ভুয়া। বিএনপির ৫৪ দল ভুয়া।’
‘তাদের (বিএনপি) আজকে বড় জ্বালা। পদ্মা সেতু হয়ে গেলো। মেট্রোরেল চালু হলো। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে। কিছু দিন লোডশেডিং হয়তো থাকবে। সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। বিএনপির অন্তর্জ্বালা কমবে না। নালিশ করতেই থাকবে।’-যোগ করেন কাদের। জ্বালানি সংকট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বিশ্ব পরিস্থিতি দায়ী উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সারা বিশ্বে আজকে স্যাংশন, যুদ্ধ, নতুন নতুন সংঘাত পৃথিবীকে স্থিতিহীন করে তুলেছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি এটা শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সমস্যা। বড় বড় দেশগুলো যুদ্ধ করে। একে-অন্যকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে সেটার জন্য কষ্ট করতে হয় বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর সাধারণ মানুষকে। এই কষ্টের জন্য আমরা দায়ী নয়। এই কষ্টের জন্য দায়ী আজকে বিশ্বের সংকটজনক পরিস্থিতি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘শেখ হাসিনা কাতারে গিয়ে জ্বালানির যে সহযোগিতা পেয়েছেন সেটা আমাদের সংকট থেকে সামনের দিনগুলোতে উদ্ধার করবে। আপনাদের কাছে চামচাগিরি করব না। যা সত্য তাই বলব। সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য কষ্ট পাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর পর আজ বাংলাদেশে শেখ হাসিনার চেয়ে গরিব মানুষের আপনজন আর কেউ নেই। এই বাংলাদেশে গত ৪৮ বছরে সবচেয়ে পরিশ্রমী ও দক্ষ প্রশাসক শেখ হাসিনা। ৪৮ বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা ও সবচেয়ে দক্ষ কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। এই সম্মান বাংলাদেশের মানুষের। আমরা তাকে নেতা বানিয়েছি।’
আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন বলে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি জানুয়ারিতে নির্বাচন করতে পারেনি। ফেব্রুয়ারিতে পারেনি। মার্চ, এপ্রিল, মে মাসেও পারিনি। জুনেও পারবে না। জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর, নভেম্বরেও পারবে না। ডিসেম্বরেতো নির্বাচন। তখন হবে ফাইনাল খেলা।’
স্মরণসভায় আব্দুল জলিলের নেতৃত্বের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আব্দুল জলিল দুর্দিনে দলের পতাকা ধরে রেখেছিলেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দল সুসংগঠিত হয়ে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। আমার রাজনীতিক বয়সে আওয়ামী লীগের যত সাধারণ সম্পাদক দেখেছি, তার মতো নেতৃত্ব আর কাউকে পাইনি।’
এসময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, নওগাঁ-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম, নওগাঁ-৫ সদর আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, নওগাঁ-৬ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন হেলাল, সাবেক এমপি ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, সাবেক এমপি শাহিন মনোয়ারা হক, জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট খোদাদাদ খান পিটুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের গ্রামের বাড়ি শহরের চকপ্রাণ মহল্লায় কবর জিয়ারত ও তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন সেতুমন্ত্রী। পরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন। ছয় বছর পর নওগাঁয় আসেন ওবায়দুল কাদের। তার আগমন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।