ফাইল ছবি
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকায় প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। শেখ হাসিনা সরকারের শেষ বছরগুলোয় মার্কিন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও অন্যান্য খাতে সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলছে। তবে এ ক্ষেত্রে দেশটির দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, সে বিষয়ে জানার আগ্রহ সবার।
এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল আগামীকাল শনিবার ঢাকা আসছে। কূটনীতিকেরা মনে করছেন, হাসিনা সরকারের আকস্মিক পতনকে ভারত নিজেদের জন্য একটি কৌশলগত পরাজয় মনে করছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে বাংলাদেশ পরিস্থিতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তুলে ধরে সহযোগিতা চেয়েছেন। এমন প্রেক্ষাপটে লু দিল্লি হয়ে ঢাকা আসছেন। সার্বিক বিচারে মার্কিন এই দলটির এবারকার ঢাকা সফরে নানামুখী তাৎপর্য আছে।
শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তাঁর সেখানে অবস্থান ও রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সরকারে একধরনের অস্বস্তি আছে। বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, ‘কূটনৈতিক দৃশ্যমানতা, দেশের অর্থনৈতিক চাহিদা ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন বাস্তবতায় মার্কিন প্রতিনিধিদলটির সফর সময়োপযোগী ও অর্থবহ হওয়ার সুযোগ আছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত আজকের পত্রিকাকে শুক্রবার বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কীভাবে চলছে, সংস্কার ও জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সঠিক ধারণা দেওয়া দরকার।’
প্রতিনিধিদলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহকারী মন্ত্রী ব্রেন্ট নেইম্যান ছাড়াও দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও থাকছেন। মার্কিন কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দীন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
দেশ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, এমন প্রেক্ষাপটেও মার্কিন দলটির সফর গুরুত্বপূর্ণ, এমন মন্তব্য করে হুমায়ূন কবির বলেন, লু বাদে এই দলে অন্যরা আর্থিক ও অর্থনৈতিক খাতের প্রতিনিধি।
কাজেই ব্যাংক খাতে সংস্কার, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা, দুর্নীতি দূর করা, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পাওয়া, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের জন্য সহায়তা পাওয়া–এমন বহু ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক, কারিগরি ও আর্থিক সমর্থন বাংলাদেশের দরকার হবে।