ফাইল ছবি
সংস্কারের পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা- তা দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, কোনো কালবিলম্ব না করে সময়মতো নির্বাচন দিন, সবাই স্যালুট জানাবে।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১২ দলীয় জোটের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে প্রণীত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ র্শীষক এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ৩১ দফা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদি আমিন।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, জনগণ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ অদৃশ্য শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে। একজন (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র করে কাপড় নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন যারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তারা আগামী দিনে কাপড় পরেও পালানোর পথ পাবেন না। আমার দেখেছি, রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। প্রধান উপদেষ্টা বলেন এক কথা, তার সহকারীরা বলেন আরেক কথা। প্রধান উপদেষ্টার কথা উপদেষ্টামণ্ডলীর সবার কথা কিনা সে ব্যাপারেও আমাদের সন্দেহ আছে।
সম্প্রতি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ঘটনা উল্লেখ তিনি বলেন, ৬-৮ আগস্ট যদি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুর করে পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করত কেউ কিছু বলত না। ৬ মাস পরে আমাদের এই চেতনা বোধ এলো কেন? আমার যদি ব্যাক ট্রেডিশন তৈরি করি, তাহলে আগামীদিন আপনার, আমার বাড়ি ভাঙচুর হবে। ভাঙচুরের নামে বাজে ট্রেডিশন চললে সংস্কার করে কি লাভ? এখন শেখ মুজিরের মৃত দিবস পালিত হবে ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনা তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারকে পেছন থেকে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তা দেশের মানুষ জানে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ইসলামের নামে কারা দখলবাজি করছে তা বিভিন্ন দপ্তরে গেলে জানা যাবে।
গয়েশ্বর বলেন, ৩১ দফা একটি জাতীয় সনদ। ৬২টি দল একমত হয়ে এ সনদ প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ৩১ দফা আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত সরব এবং বহুল চলমান একটি বিষয়। এটি বস্তুত পক্ষে সমগ্র বাঙালি জাতির মনের আঙ্ক্ষাকার প্রতিফলন ঘটবে। এ ব্যাপারে আমাদের কারও কোনো দ্বিমত নেই। আমার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধীস্থিত হলে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিটি দফা বাস্তবায়ন করব। আমাদের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধাকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। তাহলে আমাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী সরকারের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমরা চূড়ান্তভাবে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ রাজপথে ছিলাম। জুলাই-আগস্টের যে অভ্যুত্থান, আমরা বিগত ১৫ বছর বিশ্বাস করতাম এ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হবে। হঠাৎ করেই গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। আমরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা শুনে, ধৈর্য ধরে আগামীর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বির্নিমাণে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে বর্তমানে আমরা একটা অশনি সংকেত দেখছি, আমরা আতঙ্কিত। কয়েকজনের উসকানিতে সমগ্র জাতি আজ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টারা বিপ্লবের চেতনা ধারণ করছেন না। তারা নিজেরা আখের গুছানোর কাজে ব্যস্ত আছেন।
১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ৫ আগস্ট একটি স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ১৬ বছরের এক ভয়ঙ্কর দানব, ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছি। ১৬ বছরে আমাদের দেশটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি কাঠামোকে ধ্বংস করা হয়েছিল। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকারকে ধ্বংস করেছে। শত নির্যাতনের মধ্যেও আমরা রাজপথে একদফা দাবিতে সোচ্চার ছিলাম। স্বৈরাচার রাষ্ট্রকে এমনভাবে ধ্বংস করেছে যে, এখন রাষ্ট্রের প্রতিটি কাঠামো মেরামতের প্রয়োজন। এখন রাষ্ট্রকাঠামোর যে ৩১ দফা নিয়ে আমরা কাজ করছি, এটা কিন্তু শুধু বিএনপির একার নয়। এটা আপনার আমার তথা দেশের প্রত্যেকটি জনগণের। আমাদের সবাইকে এ ৩১ দফার মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। জনগণের সেবক হিসেবেই তাদের সামনে উপস্থিত হতে হবে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন- জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, ১২ দলীয় জোটের নেতা ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ মান্নান প্রমুখ। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ১২ দলীয় জোটের সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।