Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

ফাল্গুন ২১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ০৬ মার্চ ২০২৫

আওয়ামী লীগকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কিনা: বিবিসিকে ড. ইউনূস

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:২৭, ৬ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ১১:২৭, ৬ মার্চ ২০২৫

প্রিন্ট:

আওয়ামী লীগকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কিনা: বিবিসিকে ড. ইউনূস

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায় কিনা, আমি তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন তিনি। 

৬ মার্চ ‘বাংলাদেশ ইন্টেরিম লিডার সেইজ হি ইজ ড্যাজেল্ড বাই টাসক অ্যাহেড’ শিরোনামে করা প্রধান উপদেষ্টার ওই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যমটি। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত বছর ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর যখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন তিনি বিস্ময় বোধ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, সরকার পরিচালনার বিষয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিলনা। আমি এর আগে কখনও সরকারি প্রশাসন চালাইনি এবং সঠিকভাবে সবকিছু পরিচালনা করতে অনেক কিছু শিখতে হয়েছে।

শান্তিতে নোবেলজয়ী ওই অর্থনীতিবিদ বলেন, পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর আমরা সবকিছু গুছিয়ে নিতে শুরু করলাম। দেশের আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং অর্থনীতি সংশোধন ছিল প্রধান অগ্রাধিকার। 

এ বছরের শেষে অনুষ্ঠিত হতে পারে জাতীয় নির্বাচন। তবে ওই নির্বাচনে ভারতে পালিয়ে যাওয়া হাসিনার দল আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করবে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনাতে দেয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেছেন, তাদেরকেই (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এটা (নির্বাচনে অংশগ্রহণ) করতে চায় কিনা, আমি তাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্বাচনে কারা অংশ্রগ্রহণ করবে তা নির্বাচন কমিশনই নির্ধারণ করে বলে জানিয়েছেন তিনি। ড. ইউনূস বলেছেন, এখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এরপর অর্থনীতি। কেননা দেশের অর্থনীতি এখন বিধ্বস্ত এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রায়। অবস্থা এমন যেন গত ১৬ বছর ধরে এর ওপর দিয়ে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। আর আমরা তার ধ্বংসাবশেষ কুড়ানোর চেষ্টা করছি। 

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশকে লৌহ হস্তে শাসন করেন। আওয়ামী সরকারের সদস্যরা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালান। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা ও কারাগারে আটকের জন্য হাসিনা ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত।

গত আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনার পতন হয়েছে। সেসময় ড. ইউনূস দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। পরে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের অনুরোধে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব পালন করতে দেশে ফিরে আসেন। 

২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছেন ড. ইউনূস। এ বিষয়টি নির্ভর করবে সরকারের সংস্কারের ওপর। কেননা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। ইউনূস বলেছেন, আশানুরূপ সংস্কার যদি দ্রুত শেষ হয় তাহলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করতে পারব। কিন্তু সংস্কারে যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে নির্বাচন করতে আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। 

আগস্টে বাংলাদেশে যে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, তা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে এসেছি আমরা। তখন মানুষকে গুলি করা হয়েছে, তাদের নিহত করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার সাত মাস পার হলেও ঢাকার মানুষ বলছেন, এখনও আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার হয়নি। পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অধিক ভালো একটি আপেক্ষিক ধারণা। গত বছরের মানদণ্ডে এটা বিচার করলে এ বছর ভালো মনে হতে পারে। এখন যা ঘটছে তা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। এমন ভঙ্গুর পরিস্থির জন্য পতিত সরকারকে দায়ী করেছেন ড. ইউনূস। 

তিনি বলেছেন, আমি এসব ঘটনা ঘটার পক্ষে সমর্থন করছি না। আমি বলছি, আপনাকে বিবেচনা করতে হবে আমরা কোনো আদর্শিক দেশ বা শহর নই যেটা আমরা রাতারাতি তৈরি করে ফেলতে পারবো। এই পরিস্থিতি উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া, যা বহু বছর ধরে চলছে। 

শেখ হাসিনার নৃশংস শাসনে পিষ্ঠ মানুষ এখনও তার ওপর ক্ষুব্ধ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী তার বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছেন। তারা ছাত্রজনতার ওপর মারাত্মক দমন-পীড়ন চালানোয় হাসিনার বিচারের দাবি করেছেন। বাংলাদেশের আদালত হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে তাতে এখনও সাড়া দেয়নি ভারত।

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার দলের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে বিবিসি। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের স্থপতি- হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার বাড়িতে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। ইউটিউবে হাসিনা ভাষণের ঘোষণা দেয়ার পর এমন ঘটনা ঘটে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেয়ার অভিযোগ এনেছে আওয়ামী লীগ। 

দলটির সদস্যদের দাবি তারা বাংলাদেশে নিরাপদ নয়, এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. ইউনূস তার সরকারকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, এখানে আইন আছে, আদালত আছে, থানা আছে, তারা সেখানে যেতে পারেন এবং অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। বিবিসির সংবাদদাতার কাছে অভিযোগ করলে হবে না, থানায় গিয়ে অভিযোগ করুন। দেখুন, আইন তার নিজস্ব পথে চলছে কিনা। 

মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) কার্যক্রম সংকুচিত করার মাধ্যমে বৈদিশিক সহায়তার পরিমাণ কমিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সংস্থাটির সকল কর্মসূচি কার্যকরভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্তে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে এর প্রভাব পড়তে পারে। এ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেছেন, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। তিনি আরও বলেন, এটা সহায়ক হয়েছে। কেননা তারা যেটা করছে সেটা আমরা করতে চেয়েছিলাম। যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং এমন আরও অনেক কিছু। তবে সেগুলো আমরা তাৎক্ষণিকভাবে করতে পারিনি। 

বাংলাদেশে সরকারি উন্নয়ন সহায়তা সরবরাহকারী তৃতীয় বৃহত্তম দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর বাংলাদেশকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি। এই ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে তা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ড. ইউনূস বলেন, যখন এটা হবে তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer