ফাইল ছবি
হিমালয়ের হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাওয়ার ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের শঙ্কা নিয়ে বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করে আসছেন। তবে বিশ্বের উচ্চতম এই পর্বতমালায় একটি বিস্ময়কর ঘটনা জলবায়ু সংকটের প্রভাব কমিয়ে দিতে পারে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে।
৪ ডিসেম্বর নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব নির্দিষ্ট উচ্চতায় থাকা বরফরাশিতেও পড়ে। বিষয়টি একটি বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যার ফলে পাহাড়ের ঢালে শক্তিশালী বাতাস রয়ে যায়।
গবেষণাটির প্রধান অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের হিমবিদ্যার অধ্যাপক ফ্রান্সেসকা পেলিসিওটি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, উষ্ণ জলবায়ু হিমালয়ের হিমবাহের ওপরের বাতাস ও সরাসরি বরফপৃষ্ঠের সংস্পর্শে থাকা শীতল বাতাসের মধ্যে বড় ধরনের তাপমাত্রার পার্থক্য সৃষ্টি করে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, এটি হিমবাহের পৃষ্ঠে একটি উত্তাল তাপ পরিবর্তন বৃদ্ধির পাশাপাশি পৃষ্ঠের বায়ু ভরের শক্তিশালী শীতলীকরণের দিকে ধাবিত করে। শুষ্ক ও ঠাণ্ডা পৃষ্ঠের বায়ু আরো শীতল ও ভারী হয়ে তলিয়ে যায়। তখন বায়ুর ভর ঢাল বেয়ে উপত্যকায় প্রবাহিত হয়।
যার ফলে হিমবাহের নিম্নাঞ্চল ও আশপাশের বাস্তুতন্ত্রের ওপর শীতল প্রভাব পড়ে। বিশাল এই পর্বতমালার বরফ ও তুষার ১২টি নদীর পানি সরবরাহ করে। ১৬টি দেশের অন্তত ২০০ কোটি মানুষের বিশুদ্ধ পানির উৎস এই পর্বতমালা। পরবর্তী কয়েক দশকে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকায় হিমালয়ের হিমবাহগুলো এই নিজস্ব সংরক্ষণের শীতল প্রভাব বজায় রাখতে পারবে কি না তা খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্রান্সেসকা পেলিসিওটি বলেন, ‘গবেষণায় আমরা যে বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করেছি, তা সমগ্র বিশ্বের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মিলে গেলে বিশ্বের যেকোনো হিমবাহেই এই ঘটনা ঘটতে পারে।’পেলিসিওটি আরো বলেন, এই গবেষণা নতুন পাওয়া তথ্য এবং এর ব্যাপক প্রভাবগুলো প্রমাণের জন্য আরো বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি উপাত্ত সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার ওপর আগ্রহোদ্দীপক প্রেরণা দিচ্ছে।
পেলিসিওটি বলেন, এ ব্যাপারে আরো বিশ্লেষণ প্রয়োজন। এই গবেষণার পরবর্তী লক্ষ্য শীতল প্রভাবের জন্য দায়ী হিমবাহের বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত করা। তবে অন্য কোথাও এই অনুমান যাচাই করার সুযোগ কার্যত নেই।