-সংসদ সদস্য অসিম কুমার উকিল। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহ: নেত্রকোনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল তাঁর ঐচ্ছিক তহবিলের বরাদ্দের টাকা প্রকৃত দরিদ্রদের না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে পরবর্তীতে তালিকা প্রণয়নে সতর্ক হওয়ার কথা বলেছেন সংসদ সদস্যও।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি অসীম কুমার উকিলের নির্বাচনী এলাকা কেন্দুয়ায় নিজ বাস ভবনে বিতরণ করা হয় ঐচ্ছিক তহবিলের বরাদ্দের অর্থ। স্থানীয়দের অভিযোগ, অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের পাশাপাশি অনেক বিত্তশালীরাও এই তহবিলের টাকার চেক পেয়েছেন। তালিকা প্রকাশের পর শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। খোদ আওয়ামীলীগের তৃণমূলের অনেক নেতাও ফেসবুকে প্রতিবাদে সরব হন এনিয়ে।
চিরাং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলি খান, বাংলাদেশ আইন সহায়তা কেন্দ্র, কেন্দুয়া শাখার সভাপতি শাহ আলী তৌফিক রিপনসহ অনেকে ফেসবুকে বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিবাদী পোস্ট করেন। এতে তারা অভিযোগ করেন, কেন্দুয়া উপজেলাতে অসংখ্য অসহায় ব্যক্তি থাকার পরেও সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের মাঝে ঐচ্ছিক তহবিলের দশ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন দলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্য হয়েও সরকারের দরিদ্রবান্ধব নীতি উপেক্ষা করে কিছু চেনা মুখ দেখে বিশেষ বরাদ্দের অর্থ বিতরণে এই ধরণের স্বজনপ্রীতি মেনে নেওয়া যায় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর হতে সদ্য ১ম শ্রেণীর সরকারি চাকরি হতে অবসরপ্রাপ্ত (বর্তমানে পিআরএলে থাকা) আয়েশ উদ্দীন ভূইয়া, গন্ডা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোঃ লুৎফর রহমান, আশরাফুল হক ভূঞা গোলাপ, শেখ কামাল, নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক আনোয়ার উদ্দিন হিরনসহ আরও অনেক সামর্থ্যবান মানুষ।
কেন্দুয়া পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ইয়াসিন আলম সোহাগের নেতৃত্বে সম্পদশালী পরিবারের সন্তান হওয়ার পরেও ছাত্রলীগের মোঃ শামীম ভূঞা, মোজাম্মেল হক, মোঃ মেহেদী হাসান চৌধুরীকে ঐচ্ছিক তহবিলের টাকা প্রদান করা হয়েছে। ছাত্রলীগ ছাড়াও আর্থিকভাবে সচ্ছ্বল হয়েও তহবিলের টাকা গ্রহণ করেছেন কেন্দুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক বাপ্পি খন্দকার । ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের অসচ্ছল কর্মীদের বাদ দিয়ে পৌর ছাত্রলীগের আহ্বায়কসহ ধনাঢ্য পরিবারের ছেলেদের দশ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
অনুদানপ্রাপ্ত বর্তমানে পিআরএলে থাকা প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা আয়েশ উদ্দীন ভূইয়াকে বেশ কয়েকবার মোবাইলে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া- আটপাড়া আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঐচ্ছিক তহবিলের বরাদ্দ আনা হয়েছে এলাকার মানুষের সহায়তা দেয়ার জন্য। যাদের তালিকা করতে দেয়া হয়েছে তাতে কিছু বিত্তবান লোক তালিকাভুক্ত হয়ে গেছে। তবে আগামীতে তালিকা প্রণয়নে আরো সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।’’
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের হিসাব শাখা-২ এর একটি পরিপত্রের মাধ্যমে গত ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সালে মাননীয় সংসদ সদস্যগণের অনুকূলে মঞ্জুরিকৃত ঐচ্ছিক তহবিল হতে ব্যয় বরাদ্দ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করা হয়। পরিপত্রের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা বার্ষিক একটা আর্থিক বরাদ্দ পান যার মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করা যাবে।