ছবি: বহুমাত্রিক.কম
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত এলাকার আত্মপ্রত্যয়ী এক নারীর নাম রুফিনা হেমব্রম।ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে।একসময় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটত তাঁদের।তবে সুতা ও ঝুট কাপড় দিয়ে পাপোশ তৈরির কাজ শেখার পর তাঁর সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
রুফিনা বাড়িতে গড়ে তুলেছে পাপোশ তৈরির কারখানা। শুধু রুফিনা হেমব্রম নন, তাঁর মতো ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চাপাতি গ্রামের অধিকাংশ দরিদ্র নারী এখন পাপোশ বানিয়ে সংসারের হাল ধরছেন।সদর উপজেলার চাপাতি গ্রামে রুফিনা হেমব্রম বাড়িতে দেখা যায়, প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন নারী-পুরুষ পাপোশ তৈরির কারখানায় কাজ করছে।ভেতরে ঢুকতেই তাঁতের খটখটশব্দ।
কোনো কোনো নারী তাঁতে পাপোশ বুনছেন।কেউ পাপোশ ডিজাইন করছেন।কেউ আবার মেশিনে সুতা থেকে পাপোশের জন্য রশি বুনছেন।রুফিনা হেমব্রম বলেন,অভাব ঘোচাতে একটি সংস্থার মাধ্যমে পাপোশ তৈরির কাজ শেখেন।কয়েক মাস ধরে তিনি পাপোশ তৈরি করে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনের উপার্জনে বর্তমানে সংসারের অভাব অনেকটা কেটেছে।
এদিকে একইভাবে পাপোশ তৈরির কাজে স¤পৃক্ত জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কাদিহাট জোতপাড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম।শুধু নিজে নন,তাঁর হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ওই গ্রামের কয়েক শ পরিবারের বেকার নারীরা।এছাড়া পুরুষও কাজ করেন তাঁর কারখানায়।উদ্যোক্তা হিসেবে অনন্য ভূমিকা রাখায় জাতীয়ভাবে পুরস্কৃতও হয়েছেন ফাতেমা।
২০০৪ সালে শুরু করা ক্ষুদ্র এ শিল্পটি কালের পরিক্রমায় বর্তমানে বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। ফাতেমার এখন দুটি কারখানা।চারটি থেকে ৬০টি মেশিন হয়েছে।খুব অল্প সময়ে তাঁর উৎপাদিত পাপোশের কদর বাড়ে,দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে তাঁর বানানো পাপোশ। ছয় মাস পরপর সাত-আট লক্ষ টাকার অর্ডার আসে রাশিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ড, জার্মানি, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। একসময় ফাতেমা নিজেই এ কাজ করতেন। এখন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন শ্রমিকদের।সঙ্গে করছেন কারখানা তদারকি।তাঁর স্বামী কাঁচামাল সংগ্রহ ও বাজারজাতের কাজ করছেন।ফাতেমার কারখানায় কাজ করছেন দুইশত নারী ও পুরুষ।
তার মধ্যে শিক্ষার্থীও রয়েছে। সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিদিন তৈরি হয় কমপক্ষে তিন হাজার পাপোশ,টেবিল ম্যাট ও দেয়াল ম্যাটসহ বাহারি পণ্য।আর এ পণ্য বিক্রয়ের টাকায় চলে ওই সব খেটে খাওয়া শ্রমিকের সংসার।চলে অনেকের পড়াশোনার খরচও।তাঁরা দৈনিক আয় করেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।ফাতেমা বলেন,শত বাধা আর কষ্ট ডিঙিয়ে আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি।
সুতা ও ঝুটের দাম বাড়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কোনো বিড়ম্বনা ছাড়াই স্বল্পসুদে ঋণ পেলে এ শিল্পে যুক্ত হয়ে বেকারত্ব ঘুচবে অনেকের। ঠাকুরগাঁও বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান বলেন, গ্রামাঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন নারী পাপোশ তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা আনছে।এতে নারীদের একধরনের ক্ষমতায়ন হচ্ছে।বিসিকের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।