Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

কার্তিক ৮ ১৪৩১, শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪

পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন ১০ অক্টোবর

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:১৫, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

প্রিন্ট:

পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন ১০ অক্টোবর

ছবি- সংগৃহীত

ঢাকার কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। আগামী ১০ অক্টোবর ৮২ কিলোমিটার এই রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন ট্রেনে করে পদ্মা সেতু পাড়ি দেবেন তিনি। 

রোববার রাতে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন উদ্বোধনের তারিখসংক্রান্ত এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু রেল সংযুক্ত প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য সময় দিয়েছেন। ওই দিন কমলাপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটবে।’

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা রেললাইন উদ্বোধন কেন্দ্র করে সমাবেশের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এখনো জায়গা চূড়ান্ত করা হয়নি।

আগেরবার যেহেতু পদ্মা নদীর ওই পারে সমাবেশ হয়েছিল, তাই এবার এই পারে সমাবেশ হতে পারে।’এদিকে গত ১৭ আগস্ট উদ্বোধন হতে যাওয়া অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। দুই দিন পর পুরো পথে ট্র্যাক কার চালিয়ে পরীক্ষা করা হয়। আগামী বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হবে।

প্রকল্প সূত্র বলছে, কাজ বাকি রেখেই চালু হতে যাচ্ছে ঢাকার কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের অধীন এই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। সব ধরনের কারিগরি কাজ শেষ না হওয়ায় শুরুতে মাঝের কোনো স্টেশনে ট্রেন থাকার সুযোগ নেই। নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও পুরাতন স্টেশন ভবন পুনর্নির্মাণের কাজ প্রায় অর্ধেক বাকি। প্রকল্পের অগ্রগতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি কাজ হয়েছে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে ৯৬ শতাংশ।

আর ঢাকা-মাওয়া অংশের কাজ হয়েছে ৭৯ শতাংশ। শুরুতে এই অংশই চালু হচ্ছে। যেখানে গড় কাজ হয়েছে ৮৭.৫ শতাংশ। এই মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে সেতু, কালভার্ট, বাঁধের মতো বড় অবকাঠামোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। বাকি আছে স্টেশন ভবন ও নতুন স্টেশনে সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ। ঢাকা থেকে মাওয়ার পথে এখনো বড় দুটি সেতু ও সাতটি কালভার্ট/আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ বাকি আছে। এই অংশে চারটি স্টেশন রয়েছে। সবগুলোর কাজই চলমান। ভাঙ্গা-যশোর অংশে ৭৬ শতাংশ কাজ হয়েছে।

রাজধানীর কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা, কেরানীগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, লৌহজং, পদ্মা সেতু, শরীয়তপুরের জাজিরা, মাদারীপুরের শিবচর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, নড়াইল, মাগুরা হয়ে যশোর পর্যন্ত এই রেলপথে ২০টি স্টেশন থাকবে। প্রকল্পের অধীনে মূল পথ ১৬৯ কিলোমিটার। সেখানে লুপ ও সাইডিং ৪২.২২ কিলোমিটার এবং তিন কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ মোট ২১৫.২২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে।

শুরুতে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত কয়টি ট্রেন চলবে তা এখনো চূড়ান্ত করেনি রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে এই অংশ চালু হলে আরো ছয়টি রেলপথ এর সঙ্গে যুক্ত হবে। প্রাথমিক ভাবনায় রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, যশোরের বেনাপোল, খুলনা, রাজশাহীর ট্রেনও এই পথে চালানোর চিন্তা আছে। সে ক্ষেত্রে ভারতে যাওয়ার মৈত্রী ট্রেনও এ পথ ব্যবহার করবে ভবিষ্যতে।

এক প্রশ্নের জবাবে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী তার সুবিধাজনক সময় উদ্বোধনের তারিখ চূড়ান্ত করবেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা এখনো চিঠি পাইনি।’ 

রেলওয়ের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা দিয়ে যশোরের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক যুক্ত হবে। একই সঙ্গে ভাঙ্গা থেকে পাচুরিয়া-রাজবাড়ী সেকশনটি পদ্মা সেতু হয়ে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হবে।

রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালালে রেলকে লোকসান গুনতে হবে। তাই এই রেলপথ ব্যবহার করে অন্তত রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকাকে যুক্ত করা হবে। বর্তমানে খুলনা, দর্শনা, বেনাপোল ও রাজশাহীর সঙ্গে ঢাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ রয়েছে। পদ্মা সেতু ব্যবহার করে এসব অঞ্চলে নতুন ট্রেন গেলে বিদ্যমান পথে মাঝের স্টেশনগুলোর যাত্রীরা রেলের সেবা থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এমন একটি আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

রেলের পরিকল্পনায় প্রথমে প্রকল্পের দ্বিতীয় অংশে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর কথা ছিল। এরপর ঢাকা-মাওয়া অংশকে যুক্ত করা হতো। সব শেষে যুক্ত হতো ভাঙ্গা-যশোর অংশ। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারা এবং সময়মতো সেতু বুঝে না পাওয়ায় পরিকল্পনায় বদল আনে রেল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পুরো প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথ চালু করতে চান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানো হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখনো আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আছে। সরকারের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে থাকি। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।’

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer