Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

আশ্বিন ৫ ১৪৩১, শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৯

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:৩১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রিন্ট:

বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ৯

ছবি- সংগৃহীত

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় অন্তত নয়জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে ইব্রাহিম আকিল নামে হেজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কমান্ডার রয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি'র খবরে বলা হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা’র 

বৈরুতের দক্ষিণাংশে হেজবুল্লাহর 'এলিট ইউনিট' রাদওয়ান-এর সদস্যদের সাথে বৈঠক করছিলেন তিনি। হামলায় এই ইউনিটটির সদস্যরাও মারা গেছেন। ইসরায়েল বলছে, তারা লেবাননে 'টার্গেটেড স্ট্রাইক' চালাচ্ছে।

দক্ষিণ বৈরুতের দানিয়েহ এলাকাটিতে হেজবুল্লাহর শক্ত অবস্থান রয়েছে। হামলার পরপর ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে সেখানকার আকাশে। বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। দানিয়েহ থেকে বিবিসি'র মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা হুগো বাচেগা জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবেই খুবই উদ্বেগের। হামলার স্থানটি জনবহুল এলাকায় অবস্থিত।

সেখানে হেজবুল্লার সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন তারা। ঘটনাস্থলে কোনো সাংবাদিককে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। নিকট অতীতে হেজবুল্লাহ এবং ইসরায়েল এমন পূর্ণ যুদ্ধের কাছাকাছি আর যায়নি বলে মনে করেন বিবিসি পার্সিয়ানের মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা নাফিসেহ কোনাভার্দ।

একই সময়ে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলেও কিছু পাল্টা রকেট হামলা প্রতিহত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতা পল অ্যাডামস্। হিজবুল্লাহ সারাদিনে ইসরায়েল অভিমুখে শতাধিক রকেট ছুঁড়েছে। রকেট হামলায় ইসরায়েল অধিকৃত গোলান উপত্যকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

গত কয়েকদিনে ইসরায়েলে তরফ থেকে বিভিন্ন ধরনের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে লেবানন। যার মধ্যে পেজার (বার্তা পাঠানোর যন্ত্র), ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের মতো অভিনব ঘটনাও দেখা গেছে। এসব বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ওই দুই সিরিজ হামলার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেন, “ইসরায়েল যুদ্ধের একটি নতুন পর্ব সূচনা করছে।"

সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর কেনা পাঁচ হাজার পেজারের ভেতরে বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, লেবাননের একটি নিরাপত্তা সূত্র এবং অন্য একটি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমন খবর প্রকাশ করে।

তবে ইসরায়েলি ও মার্কিন সূত্র সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিয়স ও আল-মনিটরকে বলেছে যে হেজবুল্লায় এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনে গেছে, এমন আশঙ্কার পরপরই বিস্ফোরকগুলো বিস্ফোরিত হয়।

কোনদিকে যেতে পারে পরিস্থিতি?

এমন পরিস্থিতির পর সামনে লেবাননে কী হতে পারে তার সম্ভাব্য কয়েকটি গতিপথ তুলে ধরেছেন বিবিসির সামরিক বিষয়ক সংবাদদাতা পল অ্যাডামস। প্রথমটি, হেজবুল্লাহ দুর্বল হওয়ার চিন্তা থেকে নিশ্চিত জয়ের উদ্দেশ্যে আরও হামলা।

হেজবুল্লাহর যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অনেক সেনাই আহত অবস্থায়। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক এহুদ ইয়ারির মতে, হেজবুল্লাহ বর্তমানে ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধের পর সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে, যা ইসরায়েলের জন্য বড় সুযোগ। এটি কাজে লাগাতে পারে ইসরায়েল।

আন্তর্জাতিক থিংক ট্যাংক চাথাম হাউজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অ্যাসোসিয়েট ফেলো আমজাদ ইরাকির মতে, এই হামলার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলকে উস্কানি দেয়া হয়েছে যেটা মধ্যপ্রাচ্যে পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। তার মতে হেজবুল্লাহ চাপে পড়লে পরিস্থিতি অবনতির দিকে যেতে পারে এবং তা হলে ইসরায়েলও লেবাননে স্থল অভিযান চালাতে পারে। যেহেতু ইসরায়েল গাযায় মূল উদ্দেশ্য সাধনে সক্ষম হয়নি, ফলে ইসরায়েল হেজবুল্লাহর সাথে উত্তরাঞ্চলে প্রতিরোধ গড়তে চাইবে। সংঘাত এড়ানোও সম্ভব হতে পারে, তবে শক্তি ফুরায়নি হেজবুল্লাহর।

পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লার তীব্র আঘাত হানার হুঁশিয়ারি দেন। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে হেজবুল্লাহ কিছুটা হলেও চাপে পড়েছে। বৈরুতে বিবিসি সংবাদদাতা নাফিসেহ কোহনাভার্দ জানাচ্ছেন বেশির ভাগ আহ অভিজাত তরুণ দলের অংশ যারা উচ্চ প্রশিক্ষিত যোদ্ধা। সংঘাত চললেও আরও তীব্র হামলার সক্ষমতায় কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। হেজবুল্লাহ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে তাহলে সংঘাত এড়ানো সম্ভব হতে পারে।

তবে এখন কিছুটা দুর্বল পরিস্থিতিতে পড়লেও তাদের শক্তি ফুরিয়ে যায়নি। সেটা হামলা অব্যাহত থাকা থেকে বুঝা যাচ্ছে। তবে তাদের আঞ্চলিক মিত্ররা রয়েছে। যেমন ইরান, ইরাকি শিয়া মিলিশিয়া বা ইয়েমেনের হুথিরা। তাদের অনেকের লেবাননে যাতায়াতও রয়েছে। তারা একে অপরের জন্য যুদ্ধ করে অভ্যস্ত। ফলে লেবাননে হামলা কার্যকরী হলেও তাদের একটা গভীর আঞ্চলিক সমর্থন থাকবে। সবশেষ, পেজার বিস্ফোরণ হয়তো বড় কৌশলের অংশ ছিল না।

অনেকে ধারণা করছেন যে, হেজবুল্লাহর ভেতরে পেজারে কারসাজি হয়ে থাকতে পারে এনিয়ে একরকম সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। ফলে মোসাদ বেশ দ্রুতই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফেলেছে। নয়তো সে পরিকল্পনা কাজে নাও আসতে পারতো। চ্যাথাম হাউজের মিঃ ইরাকির মতে এই পরিকল্পনা কমপক্ষে কয়েক মাসের ছিল।

এখন এটা কেন ঘটলো তা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক ধরণের জল্পনা কল্পনা রয়েছে। কিছু মিডিয়া রিপোর্ট যেমন হেজবুল্লাহর পেজারে সন্দেহের কথা বলছে, অনেক জায়গায় এটাও ধারণা করা হচ্ছে যে এটা ইসরায়েলের গাজা অভিযান থেকে কিছুটা পেছনে সরে এসে লেবাননের দিকে নজর দেয়ার একটা চেষ্টা হতে পারে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer