ফাইল ছবি
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে। দেশটির পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে গেলেন তিনি। এর ফলে ক্ষমতার মসনদে বসার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হতে চলছেন মিশেল বার্নিয়ে সরকার।
বুধবার ফ্রান্সের পার্লামেন্টের ৫৭৭ সদস্যের মধ্যে ৩৩১ জন বার্নিয়েরের সরকারের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬২ সাল থেকে কোনো ফরাসি সরকারকে এ ধরনের ভোটের মাধ্যমে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করা হয়নি। শিগগিরই প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কাছে বার্নিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আইনপ্রণেতাদের অনাস্থা ভোটে মিশেল বার্নিয়ে হেরে যাওয়ার পর পার্লমেন্টের স্পিকার ইয়ায়েল ব্রাউন-পিভেট বলেন, ‘বার্নিয়েকে এখন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে এবং পার্লামেন্ট বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে।’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ে এর আগে বিশেষ ক্ষমতাবলে বিতর্কিত এক বাজেট বিল পাস করে তোপের মুখে পড়ে যান । এমপিদের ভোট ছাড়াই বিল পাস করার কারণেই প্রধান বিরোধী দল ও বামপন্থি দলগুলো ওই সময়েই সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
৬ হাজার কোটি ইউরো কর বাড়িয়ে এবং ব্যয় কমিয়ে ফ্রান্সের বাড়তে থাকা সরকারি ঘাটতি কমানোই ছিল মিশেলের প্রস্তাবিত ওই বাজেটের লক্ষ্য।
বিতর্কিত এ বাজেট নিয়ে বিবিসির প্রতিবেদন বলা হয়, গেল নভেম্বরে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৬৭ শতাংশ মানুষ এই বাজেটের বিরোধিতা করেন। এর বিরোধিতা উপেক্ষা করেই বিশেষ ক্ষমতাবলে পার্লামেন্টে এমপিদের ভোট ছাড়াই বাজেট বিলটি পাস করিয়ে নিয়েছেন মিশেল। এতে করে দেশটির প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনাল র্যালি, এনআর ও বামপন্থি দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এলিসি প্রাসাদ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সফরের শেষে ফ্রান্সে ফিরে এসেছেন।
এর আগে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, বুধবারের ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন তিনি পদত্যাগ করবেন না।
প্রসঙ্গত, ফ্রান্সে চলতি বছরের জুন ও জুলাইয়ে আগাম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় দেশটির পার্লামেন্ট রাজনৈতিকভাবে তিন ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর মিশেল বার্নিয়েকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
উল্লেখ্য, ডানপন্থি রিপাবলিকান (এলআর) দলের প্রবীণ সদস্য মিশেল বার্নিয়ের রাজনৈতিক জীবন বেশ দীর্ঘ। ফ্রান্স ও ইইউ উভয় ক্ষেত্রেই বিভিন্ন সিনিয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
৭৩ বছর বয়সি বার্নিয়ে ইইউর ব্রেক্সিট বিষয়ক প্রধান আলোচক ছিলেন। তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকারের সাথে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন।